Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কৃষিকথার আত্মকথা

আমার নাম কৃষিকথা। আমাকে এক সময় ডাকা হতো কৃষি-কথা বলে। আমার পূর্বসূরি ‘কৃষি সমাচার’ নামে তৎকালীন বঙ্গীয় কৃষি বিভাগ ঢাকা থেকে ১৯২১ সনে ত্রৈমাসিক সাময়িকী হিসেবে প্রকাশ করা হয়। ‘কৃষি সমাচার’ ১৯৩৯ সনে ‘কৃষিকথা’ নামে দ্বিমাসিক ভিত্তিতে প্রকাশিত হতে থাকে। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অধিক খাদ্য ফলাও অভিযান শুরু হলে কৃষি সংক্রান্ত প্রচার কাজ কিছুটা জোরদার করা হয়। ফলে কৃষিকথা দ্বিমাসিক  থেকে মাসিকে রূপান্তরিত হয়। প্রথমদিকে কৃষিকথা প্রকাশিত হতো বঙ্গীয় কৃষি বিভাগ, রমনা, ঢাকা থেকে এবং ছাপা হতো বঙ্গীয় সরকারি প্রেস, আলীপুর, কলিকাতা থেকে। উল্লেখ্য, ওই সময়ের পাবলিক রিলেশন অফিসারের ঠিকানা ছিল ডিরেক্টরেট অব এগ্রিকালচার, বেঙ্গল, রাইটার্স বিল্ডিংস, কলিকাতা। তবে সব সময় একই প্রেস থেকে ছাপানো হতো না। বিভিন্ন সময় যেসব প্রেস থেকে ছাপানো হতো তার মধ্যে ইন্ডিয়ান ফটো এনগ্রেভিং কো. লিমিটেড, নিউ হিলাল প্রেস, কলিকাতা, কারিমিয়া প্রিন্টিং ওয়ার্কস লি., ঢাকা, দি স্টার প্রেস, ২১/১, শেখ সাহেব বাজার লেন, ঢাকা, জিনাত প্রিন্টিং ওয়ার্কস, ১৯, রমাকান্ত নন্দী লেন, ঢাকা, ইস্ট পাকিস্তান গভর্নমেন্ট প্রেস উল্লেখযোগ্য। উল্লেখ্য, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ইস্ট পাকিস্তান গভর্নমেন্ট প্রেসের নাম হয় বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট প্রেস বা বিজি প্রেস। এরপর ১৯৭৮ সনে খামারবাড়িতে নিজস্ব প্রেস প্রতিষ্ঠিত হলে এখান থেকেই ছাপার কাজ সম্পন্ন হতে থাকে।  আমার জন্মলগ্নে আমার নগদ  বিক্রয় মূল্য ছিল মাত্র দুই আনা এবং বার্ষিক চাঁদা ছিল ডাকমাশুলসহ মাত্র এক টাকা। কৃষিকথা, আগস্ট, ১৯৪৬ সংখ্যাটিকে যেহেতু ষষ্ঠ বর্ষ-পঞ্চম সংখ্যা হিসেবে দেখান হয়েছে সেহেতু কৃষিকথার জন্ম সন ধরা যায় ১৯৪১। কৃষিকথার জন্মসন ১৯৪১ ধরেই অদ্যবধি প্রকাশকালের হিসাব করা হচ্ছে।  সে অনুযায়ী আমি এ মাসেই ৭৫ বছরে পদার্পণ করছি।


ইংরেজি এপ্রিল মাসকে প্রথম মাস বা প্রথম সংখ্যা ধরে তখন বছর হিসেব করা হতো যা পরে ইংরেজি জানুয়ারি মাসকে এবং এরপর বাংলা সনের বৈশাখ মাসকে বছরের প্রথম মাস বা প্রথম সংখ্যা হিসেবে ধরে গননা করা হয়।  দীর্ঘ ১৯ বছর পর ১৯৬১ সনে কৃষি তথ্য সংস্থার জন্মের পর কৃষি বিভাগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ‘কৃষিকথা’ অর্থাৎ আমি চলে আসি ‘কৃষি তথ্য সংস্থা’র অধীনে। ১৯৭০ সনের দিকে ইডেন বিল্ডিং, রমনা থেকে ৩, রামকৃষ্ণ মিশন রোড, ঢাকায় স্থানান্তরিত হই। এরপর ১৯৮২ সনে ঢাকা মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র জাতীয় সংসদ ভবনের পূর্ব পাশে নিজের বাড়ি ‘খামারবাড়ি’তে উঠি এবং আশা করি বাকি জীবন এ বাড়িতেই কেটে যাবে। খামারবাড়ির সম্মুখ ভবনের ১ম ও ২য় তলায় আমার অবস্থান। এখন আমার নগদ মূল্য ৫ টাকা এবং বার্ষিক চাঁদা ডাকমাশুলসহ মাত্র ৫০ টাকা। বছরের যে কোনো সময় আমার গ্রাহক হওয়া যায়। একসঙ্গে ২০ কপি বা তার অধিক সংখ্যা নিলে ৫০ টাকার স্থলে ৪২ টাকা হারে নেয়া হয়। আমার জানা মতে, এত কম দামে আর কোনো ম্যাগাজিন এ দেশে পাওয়া যায় না। দেশের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের কথা ভেবেই সরকার ভর্তুকি দিয়ে আমার মূল্য এ কম নির্ধারণ করেছে। মূল্য কম বলে আমার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব কিন্তু মোটেও কম নয়। অবশ্য আমার কোনো পাঠক, গ্রাহক কিংবা শুভানুধ্যায়ী কেউই আমাকে ছোট করে দেখে না। এজন্য আমি নিজেকে গর্বিত ও ধন্য মনে করি। কৃষির আধুনিক ও লাগসই প্রযুক্তি কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া এবং মাঠ পর্যায়ের তথ্য গবেষণার জন্য গবেষকদের বা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বা কর্মসূচি গ্রহণের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৌঁছে দেয়াই আমার প্রধান কাজ। কৃষিবিষয়ক নিবন্ধ, গল্প, কবিতা, জীবন্তিকা, নাটিকা, সাক্ষাৎকার, প্রশ্নোত্তর, কার্টুন, রম্য রচনা প্রভৃতি যুগ যুগ ধরে আমার পাতায় ছাপা হয়ে আসছে। এতে আমার পাঠকরা, চাষিভাইয়েরা অনেক উপকৃত হচ্ছে। একটি কথা তোমাদের মনে রাখা উচিত, কৃষি সাহিত্যের হাতে খড়ি কিন্তু আমার মাধ্যমেই সূচিত হয়েছে। আর আমার এক প্রবীণ বন্ধু মোহাম্মদ মোস্তফা আলীকে কৃষি সাহিত্যের জনক বলা যায়। তিনি আমাকে নিয়ে একটি স্লোগান লিখেছেন যা আজও আমি বুকে ধারণ করে চলেছি। স্লোগানটি হলো-


‘চাষের কথা
         চাষির কথা
পাবেন পড়লে কৃষিকথা।


ধান, পাট, গম, ভুট্টা, আলু, আদা, হলুদ,  পেঁয়াজ, রসুন, ধনিয়া, শাকসবজি, ফলমূলসহ বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন, সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিপণন সম্পর্কিত বিষয়ের তথ্য ও প্রযুক্তি যেমন আমি কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেই তেমনি মৎস্য চাষ এবং হাঁস-মুরগি ও পশুপালন সম্পর্কিত তথ্য ও প্রযুক্তিও কৃষকের কাছে পৌঁছে দিয়ে তোমাদের সেবা করে চলেছি। এক সময় আমি শুধু ছাপার অক্ষরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলাম। এখন কিন্তু সে অবস্থা নেই। এখন ওয়েবসাইট, ই-মেইলযোগেও আমাকে পাওয়া যায়, পড়া যায়। শুধু কি তাই- সিডি, পেনড্রাইভ, ডিভিডি প্রভৃতি মাধ্যমেও আমাকে বহন করে দেশ-বিদেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।


আমার নাম কৃষিকথা হলেও আমি কিন্তু কৃষকের ফসলের জন্য ‘প্রেসক্রিপশন’ হিসেবে  কাজ করি। তোমাদের অসুখ-বিসুখ হলে কিংবা শরীর স্বাস্থ্যের উন্নতি না হলে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন মতো ওষুধ খেয়ে সুস্থ হও তেমনি তোমাদের ফসলের রোগবালাই হলে কৃষি বিশেষজ্ঞের দেয়া প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সার, সেচ, ভালো বীজ, রোগবালাই দমন পদ্ধতি ব্যবহার করে ফসলকে সুস্থ-সবল করে তোল। এতে ভালো ফলন পেয়ে খুশি হও। তবে এ উভয় ক্ষেত্রে সঠিক প্রেসক্রিপশন খুবই প্রয়োজন। অনেক সময় দেখা যায় ভুল প্রেসক্রিপশনের কারণে তোমরা নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হও আবার তোমাদের ফসলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্য লেখক, লেখা যাচাইকারক, সম্পাদক, প্রুফ রিডার সবাইকে সদা সতর্ক থাকতে হয়।
আমার পাতায় তোমাদের অনেকের কিছু কিছু লেখা ছাপা না হওয়াতে কষ্ট পেয়ে থাকো। এর অন্তর্নিহীত কারণ উপলব্ধি করলে হয়তো কষ্ট পেতে না। তোমাদের জ্ঞাতার্থে কয়েকটি ঘটনা এখানে উল্লেখ করছি।


কৃষি তথ্য সার্ভিস আঞ্চলিক অফিস, সিলেটের জনৈক কর্মকর্তার একটি লেখা ছাপানোর জন্য প্রাথমিক বাছাই করার পর এডিট করতে গিয়ে দেখা গেল লেখাটিতে এমন কিছু কথা বা বিষয় রয়েছে যা সরকারের পলিসির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় অর্থাৎ সাংঘর্ষিক। তখন লেখাটি আর ছাপানো হলো না।


ঝিনাইদহ জেলার আশাননগর গ্রামের একজন সাধারণ কৃষক হরিপদ কাপালী অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি দিয়ে বিআর-১১ জাতের ধানক্ষেত থেকে কিছু আলাদা বৈশিষ্ট্যের গোছা থেকে ধান সংগ্রহপূর্বক চাষাবাদ করে তার এলাকায় সাফল্য পান এবং এলাকায় ওই ধানের নামকরণ করা হয় ‘হরিধান’ বলে। এ ধান সম্পর্কিত কৃষিবিদ মো. কামাল উদ্দিনের একটি লেখা যা আমার পাতায় ছাপানো সম্ভব হয়নি কারণ হরিধান নিয়ে মিডিয়ায় পক্ষে বিপক্ষে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এছাড়া জাতীয় বীজ বোর্ডের কোনো অনুমোদন তখন নেয়া হয়নি।


কৃষিবিদ মো. আরিফ হোসেন খান উদ্ভাবিত  ধান চাষে ম্যাজিক গ্রোথ প্রযুক্তি বিষয়ক একটি লেখা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমোদন না থাকার কারণে ছাপানো সম্ভব হচ্ছে না। লেখক যদিও তার উদ্ভাবিত প্রযুক্তির সাফল্যের কথা জোর দিয়ে প্রচার করছেন।


দুই পৃষ্ঠায় হাতে লেখা, দুই লাইনের মধ্যে পর্যাপ্ত ফাঁক না রাখা, হাতের লেখা অস্পষ্ট, লেখায় লেখক পরিচিতি বা নাম ঠিকানা না থাকা এ রকম বহুবিধ কারণে একটি উপযুক্ত লেখাও অনেক সময় ছাপানো সম্ভব হয় না।


স্থান সংকুলান না হওয়া অর্থাৎ অনেক সময় দেখা যায় অনেকগুলো সময়োপযোগী লেখা যা একটি নির্দিষ্ট সংখ্যায়ই কেবল ছাপারযোগ্য তা স্থান সংকুলান করতে না পারার কারণে ছাপানো যায় না। কারণ ইচ্ছা করলেই তো ফর্মা বাড়ানো যায় না। তাই বেছে বেছে সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত বলে বিবেচিত লেখাগুলোই শুধু ছাপা হয় আর বাকিগুলো পরবর্তী বছরের জন্য রেখে দেয়া হয় অথবা একেবারেই বাদ পড়ে যায়।  


উপরে বর্ণিত বিষয়গুলোর আলোকে একথা বলা যায়, আমার বুকে স্থান পেতে অবশ্যই বিতর্কমুক্ত, সময়োপযোগী, প্রযুক্তিনির্ভর, তথ্যবহুল, সুন্দর হাতের লেখা, একপৃষ্ঠায় লেখা, নাম পরিচয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকা বাঞ্ছনীয়। লেখকদের জন্য একটি সুখবর হলো এখন একটি প্রকাশিত লেখার জন্য সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা সম্মানী দেয়া হয়।


একটি বিষয়ে আমার পাঠক বন্ধুরা অভিযোগ করে থাকে আর তা হলো তারা আমাকে সময়মতো পায় না। অনেকে বার্ষিক চাঁদা পাঠিয়েও আমাকে একেবারেই পায় না। এক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো দায়ী তাহলো- সঠিক পদ্ধতিতে, সঠিক ঠিকানায় চাঁদা পাঠানো হয় না। আবার, চাঁদা প্রেরকের নাম ঠিকানা সঠিকভাবে লেখা হয় না। এছাড়া ডাক বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয় না। তবে অনিবার্যকারণবশত সময়মতো ছাপানো সম্ভব না হলে তখন পাঠকের হাতে পৌঁছতে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। আমি আশা করি, আমার খামারবাড়ির সেবক বন্ধুরা গ্রাহক, পাঠক, লেখক ও শুভানুধ্যায়ীদের অভিযোগের বিষয়ে সচেতন থাকবে, সবাইকে হাসিখুশি থাকতে সাহায্য করবে।


শেষ কথা
আমার প্রিয় সেবক ও শুভানুধ্যায়ী বন্ধুরা, আমি শুরুতেই বলেছি এখন আমার বয়স ৭৫। আমি আমার বক্তব্যের প্রায় পুরোটাতেই তোমাদের  ও আমার সুখ-দুঃখের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এর উদ্দেশ্য হলো আমার জীবন ইতিহাস প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে চিরস্মরণীয় করে রাখা। এখানে একটি কথা স্মরণ রাখতে হবে যে, তোমরা মানুষরা মরণশীল কিন্তু আমি কাগজের পাতায় ছাপা অমোছনীয় এক নাম যা চিরঞ্জীব। আমার ৭৫ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে তোমরা আমাকে নিয়ে অনেক লেখাসমৃদ্ধ বিশেষ সংখ্যা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছো এজন্য আমি অত্যন্ত খুশি ও আনন্দিত। তবে আমার পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্বে নিয়োজিত কৃষি তথ্য সার্ভিস ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছে নিবেদন এখন আমি আর সাদা-কালো থাকতে চাই না। রঙিন হতে চাই।


আশা করি আমার এ নিবেদন সংশ্লিষ্ট সবাই ভেবে দেখবে। সবাই ভালো থাকো, সুখে থাক, দেশের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে অবদান রাখ, দেশকে সমৃদ্ধশালী করে গড়ে তোল- এটাই আমার একমাত্র কামনা। সবাইকে নিরন্তর শুভেচ্ছা। আল্লাহ হাফেজ।

 

লেখক:

মো. মতিয়ার রহমান*
* সহকারী সম্পাদক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon